মতিহার থানা অঞ্চল যেন মাদকের স্বর্গরাজ্যে: ধরা পড়ছেনা মূল হোতারা

মতিহার থানা অঞ্চল যেন মাদকের স্বর্গরাজ্যে: ধরা পড়ছেনা মূল হোতারা

মতিহার থানা অঞ্চল মাদকের স্বর্গরাজ্য, অজ্ঞাত করনে ধরা পড়ছেনা মূল হোতারা
মতিহার থানা অঞ্চল মাদকের স্বর্গরাজ্য, অজ্ঞাত করনে ধরা পড়ছেনা মূল হোতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীর মধ্যে মাদকের অন্যত্তম ঘাটি মতিহার থানা অঞ্চল। এই অঞ্চলে ছোট বড় মিলে প্রায় ১৯৯ জন মাদক কারবারী রয়েছে। তবে মূল মাদক কারবারীরো সব সময়ই থাকাছ ধরা ছোয়ার বাইরে।

একাধিক স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্যের সাথে চিহিৃত মাদক কারবারীদের একটি অংশ বিশেষ সখ্যতা থাকায় মাদকের কারবার দিনে দিনে বাড়ছে এমন অভিযোগও দীর্ঘদিনের। তারপরেও নতুন ওসি যোগদান করার পর এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

এই থানা অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাতেই হাত বাড়ালেই মেলে মাদক। সেই কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলটি মাদকের স্বর্গরাজ্য। থানায় নতুন ওসি যোগদান করার পর কিছুদিন কারবার চলে গোপনে। তারপর অদৃশ্য কারনে প্রকাশ্যেই চলে এই কারবার।

এ অঞ্চলে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট ও ফেনসিডিলের কোন কমতি নেই। হাত বাড়ালেই মেলে এসব মাদক। এছাড়া মতিহার থানার নাকের ডগায় পলি, রোকশানা, রোহিসহ বেশ কয়েকজন প্রকাশ্যে দিন-রাত বিক্রি করছে গাঁজা ইয়াবা।

বর্তমানে মতিহার থানা অঞ্চলে এক বোতল ফেনসিডিলের দাম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর এই টাকা যোগাড় করতে দিন রাত এক করে ফেলছে মাদক সেবিরা। কম খরচে নেশা পুশিয়ে নিতে অনেকে সেবন করছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও টাফএ্যানটাডল ট্যাবলেট। মাদকের টাকা যোগাড় করতে চুরি ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

এসব এলাকার মোড়ে দোকান ঘরে ও একাধিক বাড়িতে চুরি ঘটনা ঘটলেও আটক হচ্ছেনা চোর। উদ্ধার হচ্ছে না চুরির মালামাল। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা নিয়েই বসবাস করছেন এখানকার বাসিন্দারা।

মতিহার অঞ্চলে দির্ঘদিন যাবত পুলিশের উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে মাঝে মধ্যে মাদক সেবিদের ধরে ব্যবসায়ী বানিয়ে ১০/১৫ পিস ইয়াবা, ৫/৭ গ্রাম হেরোইন, ১০০/২০০ গ্রাম গাঁজা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হচ্ছে। এই রকম উদাহরনের শেষ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাধিক মাদক মামলার আসামী ও মূল মাদক কারবারীরা প্রকাশ্যেই বুক ফুলিয়ে বিক্রি করছে সকল প্রকার মাদকদ্রব্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয়রা জানান, মতিহার থানা এলাকার মধ্যে জাহাজ ঘাট, মহব্বতের ঘাট, সাতবাড়িয়া, ডাসমারী স্কুল মোড়ের পেছনের এলাকা, চর-শ্যামপুর (মিজানের মোড়) এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারীদের কাছে পুলিশের মাসোহারা বন্ধ হলেই, বন্ধ হবে মাদকের কারবার।

মতিহার থানা এলাকার উল্লেখযোগ্য মাদক কারবারীদের মধ্যে রয়েছে- ডাসমারী এলাকার মৃত মুক্তারের ছেলে পালা। তার সহযোগী মাদক কারবারী সাবদুল, কামরুল, সোহেল (জানু), সুমন, রশিদ, সাকিব, শাহজামাল, ডাসমারী স্কুলের পেছনে জাকা ও মিলন। নাজিমের ছেলে মাদক কারবারী জামাল। তার সহযোগীরা হলো- জাকা, জামিল, সাক্কার, রফিক, ছাদেক ও মাসুম। একই এলাকার মালেক, তার স্ত্রী হানুফা, তার ছেলে হাবিল ও কাবিল। তেল রফিক ও তার স্ত্রী শিখা। ডাসামরী গোরস্থান মোড়ের চান্দু বাবু। একই এলাকার স্কুলের পেছনে রহমানের ছেলে মাদকের ডিলার জাকা। এাড়াও চরের ইমরানের ছেলে মাদকের গডফাদার আক্কাস গত প্রায় ৩ বছর যাবত গা ঢাকা দিয়ে আছে। বর্তমানে অবস্থান করছে কাটাখালী থানাধিন পদ্মার মিডিল চরে।

জাহাজ ঘাট এলাকার মৃত ইসাহাকের ছেলে ও বকুল। মহব্বতের ঘাটের মোয়াজ্জেমের ছেলে সজিব, জাব্বার, মাদক কারবারী জিল্লুর ছেলে পিন্টু ও টিটু, জাহাঙ্গীর, ছাইদুর, রিয়াজ।

রাসিক ২৯ নং ওয়ার্ডের জনৈক অলি, জনি ও সুমন মাদকের কারবার করলেও তারা ধরা ছোয়ার বাইরে। একাধিক স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরো এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় কথিত সাংবাদিক ওলি ও জনি। তবে জনির বিরুদ্ধে মাদকের মামলাসহ একাধিক মামলা থাকলেও ওলির নামে নেই বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ জানায়, অনলাইন কার্ডধারী দুই কথিত সাংবাদিক অলি ও জনি দাপিয়ে বেড়ায় পুরো এলাকায়। মাদক কারবারীদের বলে থানার সকল দারোগা পুলিশ আমাদের হাতে। কোন সমস্যা হলে জানাবি। তাদের বক্তব্য শুনে মনে হলো তারা মাদক কারবারীদের ছাতা। আর এ কারনেই পুলিশ তাদের কাছ থেকে দুরে থাকে। পরিস্থিতি এমন অনলাইন পোর্টালের কার্ড থাকলেই পুলিশের সাথে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে কথা বলা যায়। কি লিখতে, কি লিখবে এই ভেবে পুলিশও ভয় পায় তাদের। কিন্তু পুলিশের ধারনা নেই অসংখ্য ভুঁইফোড় আছে লিখেতে দিলে কলমও ভেঙ্গে ফেলতে পারে। আবার কলম ফেলে দৌঁড়ে পালাতেও পারে। এসব ভুইপোঁড় কথিত সাংবাদিক নিয়েও বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে জনসাধারন।  ইতিপূর্বে এই দুই কার্ডধারী অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। 

চরশ্যামপুর (মিজানের মোড়) এলাকায় মাদক কারবারীদের নেতা মনিরুল। সে আবার নিজেকে আবার প্রকাশ্যে বলে তিনি এমপি এবং মেয়রের লোক। মনিরুলের ভাই আসলাম সে একজন চিহ্নিত পেশাদার মাদকের ডিলার। এছাড়াও বোন চাম্পা ওই এলাকার বড় মাদক কারবারীদের মধ্যে একজন। মাদক মামলা রয়েছে তার দুই ভাসতির নামেও।

মাদক কারবারীদের মধ্যে আরো রয়েছে- ওই এলাকার হামিদের ছেলে ইয়াসিন, নেদার মন্ডলের ছেলে রবিউল, আকতার, মিঠু, কামরুল, হালিম, সুজন, আকবোরের ছেলে সুমন তার স্ত্রী রঙ্গিলা। একই এরঅকার কাদো অনেক রড় হেরোইন ইয়াবা কারবারী, পাঞ্জাতনের ছেলে শাহীনও একজন বড় মাদক কারবারী। রুপচাঁন, আলিমসহ শতাধিক খুচরা ও পাইকারী মাদক কারবারী রয়েছে এ এলাকায়।

এতো অপরাধ যখন মতিহারে তাহলে জুয়ার কারবার থেমে থাকবে কেন ? প্রতিদিনই বসছে জুয়ার আসর। আসরটি চলে মহব্বতের ঘাট থেকে সাতবাড়িয়া এলাকার মধ্যে। জুয়ার ঘরে ঢুকতে লাগে মাথা পিছু ১০০ টাকা। জুয়াড়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী মিট দিয়ে চলছে আসরটি। তারই খেলা ঘরে প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।

মতিহার থানা সূত্রে জানা যায়, পুরো মতিহারে ছোট বড় মিলে মাদক কারবারী রয়েছে ১৯৯জন। এর মধ্যে গত ৮ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টম্বর পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১৬ জন মাদক কারবারী। এর মধ্যে  চিহ্নিত মাদক কারবারী রয়েছে ৭জন।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে সদ্য যোগদানকৃত মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনোয়ার আলী তুহিন জানান, মাদক কারবারীর কোন ছাড় নাই। থানার প্রত্যেক অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাদক কারবারী যেই হোক মাদক পেলেই গ্রেফতার করে মামলা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পর্যায় ক্রমে সকল মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করা হবে।

ওসি আরও বলেন, এই এলাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে যারা মাদক সেবন করতে আসে। হাতে নাতে কাউকে পাওয়া গেলে তাদেরও মামলা দেয়া হবে। (আরো তথ্য পরের সংবাদে)

মতিহার বার্তা / এমজি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply